কলকাতার পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর সঙ্গে একটি সিনেমায় কাজের কথাও চলছে ফারিণের।
সংগৃহিত
সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভিসা জটিলতায় ঢাকার অভিনয় শিল্পীদের কলকাতায় গিয়ে কাজের সুযোগ প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। এতে কলকাতার নায়ক দীপক অধিকারী দেবের বিপরীতে ‘প্রতীক্ষা’ সিনেমাটি হাতছাড়া হয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের। সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে ওটায়, অবশেষে কলকাতায় পা রেখেছেন ফারিণ।
দেবের নায়িকা হতে না পারলেও অবশেষে অভিনেতার সঙ্গে দেখা হয়েছে ফারিণের।
আনন্দবাজার লিখেছে, কলকাতার পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর সঙ্গে একটি সিনেমায় কাজের কথাও চলছে এই অভিনেত্রীর।
এর মধ্যে একদিন কলকাতার অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিকের ‘স্বার্থপর’ সিনেমার বিশেষ স্ক্রিনিংয়ে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ফারিণ। সেই শোতে দেবের সঙ্গে দেখা হয় ফারিণের।
তখন ফারিণকে উদ্দেশ্য করে দেব বলেন, “যাক! অবশেষে এলে। দেখা হলো আমাদের।”
আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেবের সঙ্গে ‘প্রতীক্ষা’ সিনেমায় কাজ করতে না পারায় আফসোসও প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী।
ফারিণ বলেন, “অনেক দিন পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন তারা। আমিও আসার খুবই চেষ্টা করেছি। বেশ টানাপোড়েন গেছে তখন। শেষ পর্যন্ত ব্যাটে বলে হল না। এই তো দিন দুই আগে ‘স্বার্থপর’ সিনেমার প্রিমিয়ারে দেখাও হল দেবদার সঙ্গে। এর আগে উনার সঙ্গে সব কথা ফোনে হয়েছিল। মুখোমুখি এই প্রথম।”
কলকাতার শিল্পীরা ঢাকায় কাজ করছেন, আবার ঢাকার শিল্পীরাও কলকাতার বাংলা সিনেমায় কাজ করছেন। এতে স্থানীয় শিল্পীরা অনিশ্চয়তায় ভোগেন কী না জানতে চাইলে ফারিণের ভাষ্য, “কেউ কখনো কারও জায়গা দখল করতে পারে না। যদি দখল করতেই পারত, তা হলে ওপার বাংলা থেকে আমাকে অভিনয়ের ডাক পেয়ে এপার বাংলায় আসতে হত না। এপার বাংলার কেউ সেই কাজটা করে দিতেন। আমাকে এত ঝক্কি সইয়ে ডাকা হত না। তাই আমি কারও–বা কেউ আমার ‘রিপ্লেসমেন্ট’ হতে পারব না। আমি এভাবে ভাবিই না।
“আপনাদের ইধিকা পাল আমাদের দেশে কাজ করছেন। যথেষ্ঠ ভালো কাজ করছেন। আবার আমাদের চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান বা মোশাররফ করিম আপনাদের সিনেমায় অভিনয় করছেন। এই আদান–প্রদানটাই তো দরকার। এতে দুই দেশের মঙ্গল। আমাদেরও কাজের সুযোগ বাড়বে।”
অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর পরের সিনেমায় অভিনয় নিয়ে ফারিণ বলেন, “আগামী সিনেমা কি না জানি না। তবে অনেক আগে থেকেই টোনিদার (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) সঙ্গে কথা চলছে। ফলে তার সঙ্গে কাজের জন্য মুখিয়ে আছি।”
এই পরিচালকের সবশেষ সিনেমা ‘ডিয়ার মা’তে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। সেই সিনেমায় জয়ার অভিনয় দেখে মুগ্ধ ফারিণ।
তিনি বলেন, “আমি আর চঞ্চলদা (চঞ্চল চৌধুরী) টোনিদার বাড়িতে একসঙ্গে দেখেছি সিনেমাটা। জয়া আহসান আপু কী ভালো অভিনয় করেছেন। খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। প্রতিটি দৃশ্য ভীষণ যত্ন করে ক্যামেরায় ধরেছেন টোনিদা।”
দুই বাংলার চলচ্চিত্র অঙ্গনের পার্থক্য নিয়েও কথা বলেন ফারিণ।
তার কথায়, “কাজের ধরনে পার্থক্য রয়েছে, এখানকার কাজ অনেক বেশি সুসংগঠিত, পেশাদার। তবে আমাদের এখানকার তুলনায় খুব বেশি আলাদা না। এখন আমাদের বাজেটে পরিবর্তন এসেছে, বড় বাজেটের কাজ হচ্ছে। প্রযোজনাতেও পেশাদারিত্ব এসেছে।”
নারীকেন্দ্রিক কাজের সংখ্যা কমেছে বলেও হতাশা ফারিণ।
তিনি বলেন, ২০২৫ সালে এসে নারীর অবস্থান যতটা বদলানোর দরকার ছিল সেই অনুযায়ী বদলায়নি। পরিবর্তনটা আরও বেশি হওয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন তিনি।
“আমাদের এক টাকা পারিশ্রমিক বাড়াতে অনেকটা পথ পেরোতে হয়। সেখানে একটা নতুন নায়ক দুইটি সিনেমা করেই পারিশ্রমিক বাড়িয়ে ফেলেন। তার সেই দাবি গ্রাহ্যও হয়। তার ওপর কাজের সময়ের বিষয়টিও আছে। তাহলে আমরা কোথায় এগোলাম? রইল বাকি নারীকেন্দ্রিক সিনেমা। সেখানেও নায়িকা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ, ক্লিশে।
“হয় নারী নির্যাতন, নয় নারীর অধিকার। নারীর কাজ, তার লড়াই নিয়ে সিনেমাতে উদযাপন হয় কই? তার বাইরে আমাদের কেউ বের করতেই চান না! অথচ সেই সিনেমা ভালো ব্যবসা না করলে, তখন দোষ দেওয়া হয়, নারীকেন্দ্রিক সিনেমা বলেই চলল না! তুমি নারীকেন্দ্রিক সিনেমাকে সেই বাজেট দিচ্ছ না। হিট হওয়ার মত গল্প দিচ্ছ না।”
চরিত্রের প্রয়োজনে শিল্পীদের সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়। ফারিণ কি এমন দৃশ্য করবেন? প্রশ্নে ফারিণ বলেন, “কোন দৃশ্য সাহসী? তার মাপকাঠি কী? আমার জানা নেই।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়েও একাধিক প্রশ্ন করা হয় ফারিণকে। তবে ফারিণ জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতিমনস্ক নন, শিল্পী হিসেবে এসব বিষয়ে কথা না বলাই শ্রেয় বলে মনে করেন তিনি।
অতনু ঘোষের ‘আরও এক পৃথিবী’ সিনেমা দিয়ে টালিগঞ্জে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছিল ফারিণের। এছাড়া দেশের নাটক, সিনেমা এবং ওটিটিতেও কাজ করছেন এই অভিনেত্রী।
