বছরের শুরুতে নেওয়া লক্ষ্যগুলো হয়ত তেমনভাবে পূরণ হয়নি। এবার সেসব পালন করার সময়।
হতে সংগৃহিত
বছরের শুরুতে নানান পরিকল্পনা থাকে। যেমন- ওজন কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম, বই পড়া বা আত্ম-উন্নয়নের লক্ষ্য।
তবে অক্টোবর এলে দেখা যায়, সেই লক্ষ্যগুলোর অর্ধেকই হারিয়ে গেছে দৈনন্দিন ব্যস্ততার ভিড়ে। তখন মনে হয়, বছর তো প্রায় শেষ, এখন নতুন করে শুরু করব কেন?
তবে ‘অক্টোবর থিওরি’ বলে একটি ধারণা আছে। এরমানে হল ঠিক এই সময়-ই হতে পারে নতুন করে শুরু করার সেরা সুযোগ।
অক্টোবর থিওরি কী?
‘অক্টোবর থিওরি’- এমন একটি ধারণা, যেখানে বলা হয়- অক্টোবর মাস হল জীবনে নতুন করে গতি আনার উপযুক্ত সময়।
এই তত্ত্বর ভাবনা হল- বছরের শুরু না হোক, অক্টোবরেই হতে পারে দ্বিতীয় নতুন বছর। এই সময় মনোযোগ ফেরানো, নতুন অভ্যাস গড়া বা পুরানো লক্ষ্যগুলো আবার ধরার এক দারুণ সুযোগ তৈরি করা যায়।
যে কারণে অক্টোবর লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য উপযুক্ত সময়
যদিও ‘অক্টোবর থিওরি’ নিয়ে এখনও কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি, তবুও মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি যথেষ্ট যৌক্তিক।
‘কাম ডটকম’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে, আমেরিকার ‘পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে’র গবেষণার তথ্যানুসারে জানানো হয়- মানুষ স্বাভাবিকভাবেই নতুন সময়সীমাকে ‘ফ্রেশ স্টার্ট’ হিসেবে নেয়।
যেমন— নতুন সপ্তাহ, জন্মদিন বা নতুন ঋতুর শুরুতে তারা বেশি অনুপ্রাণিত হয়।
অক্টোবর মাসে এই সবকিছু একসঙ্গে ঘটে ঋতু বদলায়, স্কুল ও অফিসের রুটিন স্থিতিশীল হয়। আর বছরের শেষের চাপ ধীরে ধীরে সামনে আসে। তাই এই সময়টা নতুন লক্ষ্য ঠিক করার জন্য মানসিকভাবে অনেক বেশি সহায়ক।
তাছাড়া, জানুয়ারির মতো অপ্রয়োজনীয় চাপ বা বড় সিদ্ধান্তের ভয়ও অক্টোবরের ক্ষেত্রে থাকে না।
ফলে ছোট ছোট পরিবর্তন এনে ধীরে ধীরে নিজের জীবনকে বদলানো সহজ হয়।
লক্ষ্য হোক বাস্তব ও নির্দিষ্ট
সব একসঙ্গে বদলাতে চাওয়ার বদলে জীবনের একটি ক্ষেত্র বেছে নিতে হবে। যেমন- ব্যায়াম, ঘুম বা পড়াশোনা। তারপর সেটিকে বাস্তব ও পরিমাপযোগ্যভাবে নির্ধারণ করা।
এক্ষেত্রে মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ডা. ক্রিস মসুনিক একই প্রতিবেদনে বলেন, “যেমন- আমি প্রতিদিন ব্যায়াম করব বলার বদলে বলতে হবে, ‘অক্টোবর মাসে সপ্তাহে অন্তত চার দিন ২০ মিনিট করে হাঁটব। ছোট কিন্তু নির্দিষ্ট লক্ষ্য আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং নিয়মিত থাকতে সাহায্য করে।”
সময়কে কাজে লাগানো
মাসের শুরু বা সপ্তাহের প্রথম দিনকে নতুন সূচনা হিসেবে নিতে হবে।
এক মাসকে চার ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রথম সপ্তাহে পরিবেশ তৈরি, দ্বিতীয় সপ্তাহে নিয়ম তৈরি, তৃতীয় সপ্তাহে ধীরে ধীরে উন্নতি, আর চতুর্থ সপ্তাহে মূল্যায়ন।
এভাবে প্রতিটি সপ্তাহে একটি করে ছোট অধ্যায় তৈরি হলে আগ্রহ ও মনোযোগ বজায় থাকে।
অভ্যাসকে দৈনন্দিন সংকেতের সঙ্গে যুক্ত
যখন প্রেরণা কমে যায় তখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্লান্তি কাজকে থামিয়ে দেয়। তাই নির্দিষ্ট অবস্থার সঙ্গে নির্দিষ্ট কাজ জুড়ে ফেলতে হবে।
যেমন, অফিস শেষ হলেই ব্যায়ামের পোশাক পরা বা সকালের কফি ফুটতে থাকা অবস্থায় ধ্যান শুরু করা।
এভাবে অভ্যাস গড়লে তা মনে করিয়ে দিতে হয় না। নিজে থেকেই ঘটতে থাকে।
ছোট, সহজ ও আনন্দদায়ক অভ্যাস গড়া
শুধু ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করলে বেশিরভাগ সময় ফল আসে না। বরং অভ্যাসকে ছোট করে ফেলতে হবে। যেমন- একটি বাক্য লেখা বা পাঁচ মিনিট ধ্যান।
অভ্যাসের জায়গা সহজ করে নিতে হবে। জুতাটা দরজার পাশে রাখা, পানির বোতল টেবিলে রাখা, বা ডায়েরি পাশে রাখা।
নরম কিন্তু কার্যকর দায়িত্ববোধ
একজন বন্ধু বা সহকর্মীকে লক্ষ্য জানিয়ে দিন, যাতে তিনি মাঝে মাঝে খোঁজ নেন।
অথবা নির্দিষ্ট ক্লাসে নাম লেখানো, ফোনে রিমাইন্ডার দেওয়া বা সপ্তাহে একদিন অগ্রগতি নোট করা।
এভাবে ছোট দায়বদ্ধতাই এগিয়ে রাখবে।
বাধার জন্য প্রস্তুত
জীবনে ব্যস্ততা বা ক্লান্তি আসবেই। তাই মূল অভ্যাস না পারলে বিকল্প অভ্যাস রাখতে হবে।
যেমন- জিমে না যেতে পারলে ২০ মিনিট হাঁটা, বড় ধ্যানের বদলে এক মিনিট শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন করা।
এই ছোট ব্যাকআপ পরিকল্পনাগুলো ধারাবাহিক রাখবে, ফলাফলেও পার্থক্য আনবে।
ঋতুর সঙ্গেই চলুন
অক্টোবরের সন্ধ্যা- বই পড়ার বা নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর উপযুক্ত সময়। ছোট দিন মানে তাড়াতাড়ি ঘুমানোও সহজ।
সকালের আলোয় কিছু সময় কাটানো বা হালকা ব্যায়াম করস ভালো।
পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার ও প্রাকৃতিক আলো সবই নতুন অভ্যাসকে মজবুত করে তুলবে।
প্রতিসপ্তাহে একটু ভাবনা ও পর্যালোচনা
“প্রতি সপ্তাহে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় দিন নিজের অগ্রগতি দেখার জন্য— কী কাজ করছে, কী করছে না, কীভাবে আরও সহজ করা যায়”- বলেন ডা. ক্রিস।
এই ছোট পর্যালোচনা আপনার পরিকল্পনাকে নমনীয় রাখবে।
